অর্থনীতি

দুর্নীতিবাজ রোষানলে হাসানের মৃত্যু

পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সে নয়া নাটক

বিশেষ প্রতিনিধি : পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ (৫৭) মারা গেছেন। তবে কার পাপে হাসানের মৃত্যু হয়েছে তা নিয়ে চলছে নানা রহস্য। অভিযোগ রয়েছে কতিপয় দুর্নীতিবাজের রোষানলে পড়েছিলেন হাসান আহমেদ। এই দুর্নীতিবাজ চক্রটির সঙ্গে বিরোধে স্টোক করেছিলেন হাসান। পরবর্তীতে এই চক্রের বিরুদ্ধে হাসান লড়ে যাচ্ছিলেন স্ত্রী জান্নাত কে সঙ্গে নিয়ে। সম্পত্তি রক্ষার লড়াইয়ে পাল্টা মামলার শিকার হন হাসান আহমেদ ও তার স্ত্রী।
ঘটনা পর্যায়ে একটি দুর্নীতির মামলার তদন্তভার যায় পিবিআইয়ের হাতে।

সেখানে নড়েচড়ে বসে আপোস মিমাংসার উদ্যোগ নেয় ‘একজন’ এমডি। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের বৈঠকে বসে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন হাসান আহমেদ ও তার স্ত্রী জান্নাত। কিন্তু বৈঠক সমঝোতা ছাড়াই শেষ করে পরে আবার বসার সিদ্ধান্ত হয়। এর মাঝেই দিন গড়িয়ে স্টোকের রোগী হাসান ইহলোক ত্যাগ করেন।

তবে এ মৃত্যুকে ‘রহস্যজনক’ উল্লেখ করে থানা পুলিশ ও আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন মরহুমের ছোটভাই কবির আহামেদ। পল্টন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সেন্টু মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, কবির আহামেদসহ তাদের অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) বিকালে পুরানা পল্টন তাদের বাসার সামনে থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই মৃত্যুতে মৃতের ছোটভাই ও স্বজনদের সন্দেহ থাকায়, মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য লাশটি মর্গে নেওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।

কবির আহামেদ এরই মধ্যে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন, তার আগে আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছেন বলেও জানান মো. সেন্টু মিয়া। এর আগে গতকাল সোমবার (২৪ জানুয়ারি) হাসান আহমেদকে (৫৭) অসুস্থ অবস্থায় তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস তাকে প্রথমে ইসলামী ব্যাংক সেন্টাল হাসপাতাল নিয়ে যান। সেখান থেকে বারডেম হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সন্ধ্যা ৬টার সময় তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

জান্নাতুল ফেরদৌস জানিয়েছেন, তার স্বামী হাসান আহমেদের নামে অনেক সম্পত্তি রয়েছে, এসব আত্মসাৎ করার জন্য পরিবারের সদস্যরা ষড়যন্ত্র করছে। এর আগে হাসান আহমেদের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে। এমনকি দুই বছর আগে তাকে অন্যায়ভাবে পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্সের পদ থেকে তাকে সরানো হয়েছে। তাকে সরানোর পর ভাইস চেয়ারম্যান পদে হাসানের ছোটভাই কবির হোসেন বসেছেন। আর চেয়ারম্যান পদে মোতাহার হোসেন নামে একজনকে বসানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কবির হোসেন মৃতের আপন ছোট ভাই। তিনি আমার ও আমার ভাই বোনের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা মামলা করেছেন। আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।

দুই বছর আগে হাসান আহমেদ স্ট্রোক করেছিলেন জানিয়ে তার স্ত্রী বলেন, ‘সেই থেকে তিনি দাঁড়াতেও পারতেন না। হুইল চেয়ারে করে চলাফেরা করতে হতো। ‘সম্পত্তি জন্য পারিবারিক বিরোধের’ কারণেই পরিকল্পিতভাবে ‘হয়রানি’ করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। বলেন, ‘তারা লাশটা দাফনও করতে দেয়নি। তারা মামলা করে পুলিশ পাঠিয়েছে। পরে পুলিশ মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে নিয়ে যায়। অত্যান্ত দুঃখের বিষয়, তারা কেউ একবারের জন্য অসুস্থ অবস্থায় তাকে দেখতেও আসেননি। পরে ময়নাতদন্তের পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে স্ত্রী ও তার স্বজনরা মরদেহটি নিয়ে যান। হাসান আহামেদ (৫৭), চাদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার গাজিপুর গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিন আহামেদের ছেলে। দুই মেয়ে ও এক ছেলের এই জনক পুরানা পল্টনের একটি ভবনে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন।

এদিকে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান হাসান আহমেদের (৫৬) মৃত্যুকে কেন্দ্র করে আদালতের নির্দেশে পল্টন থানায় হত্যা মামলা হয়েছে বলে মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়া।তিনি জানান, হাসান আহমেদ পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তিনি হৃদরোগে ভুগছিলেন। সোমবার (২৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যার পরে ইব্রাহীম কার্ডিয়াক হাসপাতালে তিনি মারা যান।ওসি সালাউদ্দিন মিয়া জানান, হাসান আহমেদের স্বজনদের পক্ষ থেকে আদালতে একটি মামলা করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা আমরা পেয়েছি। সেই অনুযায়ী একটি হত্যা মামলা রুজু করা হচ্ছে।

 

সংশ্লিষ্ট খবর

Leave a Reply

Back to top button