![](https://dainiksottokothaprotidin.com/wp-content/uploads/2022/02/justice-.jpg)
শফিক রহমান : এবার নিরপেক্ষ সার্চ কমিটির নাম শুনেই দেশবিরোধী চক্রের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। সার্চ কমিটির প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ইতিমধ্যে তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, সংবিধানের আলোকে সর্বজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের আমরা নির্বাচিত করে রাষ্ট্রপতির কাছে নাম পেশ করবো। জাতি সর্বজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদেরই পাবে। তিনি বলেছেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি জাতির পক্ষ থেকে আমার উপরে এবং এই কমিটির উপর যে দায়িত্ব দিয়েছেন। আশাকরি সংবিধান এবং আইনের আলোকে সেই দায়িত্ব পালন করতে পারব। চ্যালেঞ্জ তো সব কাজেই আছে। চ্যালেঞ্জ থাকবে আমরা সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই আশাকরি ১০ জন নিরপেক্ষ নাম বেছে রাষ্টপতির কাছে দিতে পারব; এটা এই সময়ের মধ্যেই হবে।
যাহোক উত্তেজনা চলছে বিভিন্ন পরাজিত শিবিরে। নিরপেক্ষ সার্চ কমিটির নাম শুনেই অনেকের মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার যোগাড় হয়েছে। কারণ, এতদিন পর সরকার যখন নিরপেক্ষ ইসি গঠনে দৃশ্যমান কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছে তখন পরাজিত শক্তির গাত্রদাহ হওয়ারই কথা। এই চক্রটি অতিতেও দেশের এগিয়ে যাওয়া পছন্দ না করে নালিশ করেছে বিদেশীদের কাছে। এ নালিশের দেশ বিরোধী চক্রের মুখে ছাই দিয়েছে নিরপেক্ষ সার্চ কমিটি। কাল রবিবার থেকেই নিরপেক্ষ সার্চ কমিটি গঠনে কাজ শুরু করবেন বলে ওবায়দুল হাসান জানিয়েছেন।
এ সম্পর্কে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, সদ্য পাস হওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইনের ৪ (১) ধারায় বলা আছে এই কমিটি সততার সঙ্গে এবং নিরপক্ষেভাবে দায়িত্ব পালন করবে। দায়িত্ব পালন করে সৎ এবং সুনাম সম্পন্ন লোকদের সুপারিশ করবে। আসলে সততা এবং সুনামের কোনো মানদণ্ড নাই। তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তাব হলো সার্চ গণশুনানি করে সত্যিকার অর্থে অনুসন্ধান করবে। অনুসন্ধান করে তারা চূড়ান্ত তালিকা রাস্ট্রপতির কাছে প্রেরণের আগে একটা চূড়ান্ত তালিকা এবং তার সঙ্গে একটা প্রতিবেদন কোন যুক্তিতে কোন কারণে এই ১০ জন ব্যক্তির নাম সুপারিশ করেছে। জনমতামত যদি নেওয়া হয় তাহলে সঠিক ব্যক্তি যোগ্য ব্যক্তি পাওয়া সম্ভব।
তিনি বলেন, সার্চ কমিটি যদি সৎ ইচ্ছা প্রদর্শন করতে চায়, তারা যদি আইনের ৪ ধারায় সততা এবং নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে সৎ এবং সুনামসম্পন্ন ব্যক্তিদের তারা নিয়োগ সুপারিশ করবেন। তাদের অনেক কিছু করার আছে যদি তারা করতে চায়। এখন এটাই দেখার বিষয়। তারা যদি মনে করে আমার কাজ আমি করব কার কি হলো দেখার নাই। এটা করলে নির্বাচন কমিশন নিয়ে যে আস্থার সংকট সেটা আরও প্রকট হবে। ইসি এবং নির্বাচন কমিশনের উপর আস্থার সংকট প্রকট হবে, ব্যাপক হবে। ভয়াবহ আকারণ ধারণ করবে। যেটা আমাদের মহাবিপদের দিকে ধাবিত করবে।
ওদিকে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম) বলেন, আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটি গঠন হয়েছে। রাষ্ট্রপতি যে দুজন সদস্যের নাম প্রস্তাব করেছেন তাদের বিষয়ে আমাদের আপত্তি নেই। তবে বর্তমান সার্চ কমিটি নির্বাচন কমিশন গঠনে কাদের নাম প্রস্তাব করবে তা দেখার অপেক্ষায় সমগ্র জাতি। আমরা চাই, গঠিত সার্চ কমিটি নিরপেক্ষ ও সবমহলে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করবেন, যারা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারবেন। তবে তিনি দাবি করেন, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন গঠনে আমরা সংবিধানের বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী একটি আইন তৈরির প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু আমরা যেমন আইন চেয়েছিলাম পাস হওয়া আইনটি তেমন হয়নি।
৬ সদস্যর সার্চ কমিটি-
নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে প্রধান করে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন।কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশন চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন এবং কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এই অনুসন্ধান কমিটি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ মোতাবেক দায়িত্ব ও কার্যাবলী সম্পন্ন করবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অনুসন্ধান কমিটির কার্য সম্পাদনে প্রয়োজনীয় সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবে। গত ২৭ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের ষোড়শ অধিবেশনে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’ পাসের প্রস্তাব করেন। এরপর তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। ২৯ জানুয়ারি বিলে সই করেন রাষ্ট্রপতি। এরপর ৩০ জানুয়ারি তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।
কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। নিয়ম অনুযায়ী তার আগেই নতুন কমিশন গঠন করতে হবে রাষ্ট্রপতিকে। সেই কমিশনের অধীনেই হবে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
সংসদে উত্থাপিত হওয়ার পর বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। কমিটি দুটি সংশোধনী এনে পাসের সুপারিশ করলে ধারা দুটি সংশোধন করে বিলটি পাস হয়।
প্রথমে বিলটির নাম ছিল ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল’। সংসদে সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমে নাম হয় ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল’। রাষ্ট্রপতি সই করার পর নাম হয় ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’। এর আগে নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেন রাষ্ট্রপতি। সংলাপে অংশ নিয়ে দলগুলো তাদের মতামত ও প্রস্তাব উপস্থাপন করে। তবে বিএনপি সংলাপে অংশ নেয়নি।