সম্পাদকীয়

সরাসরি আমদানি-রপ্তানি সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে

নতুন বছরে দুই দফায় বাংলাদেশের রপ্তানির প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পে সুখবর মিলেছে। প্রথমে ইউরোপের বাজারে সরাসরি রপ্তানির শুভযাত্রা সম্পন্ন হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই চালু হতে যাচ্ছে চীনা রুটে সরাসরি কন্টেনার পরিবহন। ফলে আমদানি পণ্য আর নামাতে হবে না বিদেশি কোন বন্দরে। ট্রান্সশিপমেন্ট এড়িয়ে পণ্য পরিবহনের ফলে সময় বাঁচবে ১৩ দিন, সাশ্রয় হবে খরচ। ইউরোপে সরাসরি পণ্য রপ্তানি শুরু হওয়ায় পণ্য পরিবহনের সময় প্রায় তিন ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। ব্যয় সাশ্রয়ও হচ্ছে নূন্যতম চল্লিশ ভাগ। আমেরিকা এককভাবে বাংলাদেশ থেকে বড় আমদানিকারক দেশ হলেও এদেশে তৈরি পোশাকের ৬০ ভাগের গন্তব্য ইউরোপ। ইউরোপের বাজারে পণ্য পাঠাতে সরাসরি কোন রুট এতদিন ছিল না। সেখানকার ক্রেতারাই নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি পণ্য পরিবহনের উদ্যোগ। ইতালির রেভেনা বন্দর থেকে খালি কন্টেনার নিয়ে এসে পণ্য বোঝাই করে ফিরে যাচ্ছে জাহাজ। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার ইউরোপ এবং আমেরিকা হলেও শিল্পের কাঁচামালের প্রায় ৮০ ভাগই আসে চীন থেকে। শুধু কাঁচামালই নয়, মূলধনী যন্ত্রপাতির জন্যও নির্ভরতা চীনের ওপর। তাই চীনের সঙ্গে সরাসরি রুটে আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায় যেমন সময় বাঁচাবে, তেমনি হবে সাশ্রয়ী। চীনে শিপমেন্টের ক্ষেত্রে প্রথমে কন্টেনারবাহী চারটি জাহাজ এ রুটে নিয়মিত চলাচল করবে। এরপর যোগ হবে আরও দুটি জাহাজ। চীন থেকে পণ্য পরিবহনের রুট অবশ্য আগেও ছিল। তবে সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট হয়ে সে পণ্য চট্টগ্রামে এসে পৌঁছাতে অন্তত ২৫ দিন সময় লেগে যেত। দ্রæত কাঁচামাল আমদানির জন্য প্রয়োজন ছিল সরাসরি রুট। এ রুট চালু হলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য যেমন সহজ হবে, তেমনি তা এগিয়ে দেবে রপ্তানিমুখী শিল্পকেও। কারণ, কাঁচামালের প্রাপ্যতার ওপর নির্ভর করে দ্রæততম সময়ের মধ্যে পণ্য উৎপাদন। আমাদের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমে যাবার ঝুঁকি থাকে যদি লিড টাইম (পণ্য সরবরাহের সময়সূচী) বেশি হয়। দুটি কারণে এমনটি হয়ে থাকে। প্রথমত, শ্রমিকের দক্ষতার ঘাটতি। দ্বিতীয়ত, ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে পণ্য পরিবহনে বেশি সময় লাগা। সরাসরি পণ্য প্রেরণের ব্যবস্থার অভাবে বন্দর থেকে বন্দর ঘুরে গন্তব্যে পণ্য পৌঁছতে বিলম্ব হওয়াই স্বাভাবিক। এখন চট্টগ্রাম থেকে গার্মেন্ট পণ্য সরাসরি যাচ্ছে ইতালি। এরপর ইতালি থেকে সরাসরি যাবে জার্মানিতে। এ রুটের সাফল্যে খুলে যাবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানির পণ্য প্রেরণের পথ। একইভাবে চলতি মাস থেকেই সরাসরি পণ্য যাচ্ছে চীনে। বর্তমানে শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক সেটা এখন ঝুঁকছে বাংলাদেশের দিকে। ফলে সরাসরি দুটো রুট চালু হওয়ার পুরোপুরি সুবিধা তুলতে হলে বাংলাদেশকে ক্রেতাদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। ইউরোপ ও চীনে সরাসরি রপ্তানি পণ্য প্রেরণের সুবিধায় ভবিষ্যতে রপ্তানিকারকরা লাভবান হবেন এবং সমৃদ্ধ হবে দেশের অর্থনীতি।

Leave a Reply

Back to top button