লিড নিউজ

ভাবগাম্ভীর্যে পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর

 

লাবণ্য চৌধুরী : যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য এবং উৎসাহ, আনন্দ ও উদ্দীপনায় কোলাকুলির মাধ্যমে পবিত্র ঈদুল ফিতর পালিত হচ্ছে সারা দেশে।সারা দেশের মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবে আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে মহান আল্লাহর ক্ষমা ও অনুগ্রহ লাভের আশায় মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর এই আনন্দ আয়োজনে শামিল হন ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা।

আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর হাইকোর্ট–সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত হয়নি। এবার এখানে সকাল সাড়ে আটটায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় ঈদগাহে নারীদের জন্যও আলাদা নামাজের ব্যবস্থা করা হয়।

সকাল ৭টায় ঈদের প্রথম জামাত শুরু হয় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে। একেক ঘণ্টার ব্যবধানে বেলা পৌনে ১১টা পর্যন্ত সেখানে পাঁচটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

করোনার ধকল কাটিয়ে দুই বছর পর রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ মাঠে দেশের প্রধান ঈদ জামাত অনুষ্ঠিতহয়। সকাল সাড়ে ৮টায় শুরু হয়ে নামাজ শেষ হয় ৮টা ৩৭ মিনিটে। এতে ইমামের দায়িত্ব পালন করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন। মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এ জামাতে নামাজ আদায় করেছেন। দুই রাকাত নামাজের পর ঈদের বিশেষ খুতবা পড়া হয়। খুতবা শেষে মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয় ঈদের প্রধান জামাত। মোনাজাতে গুনাহ থেকে মুক্তি এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করা হয়। জামাত শেষে পরস্পরের সঙ্গে কোলাকুলি ও কুশল বিনিময়ের মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন মুসল্লিরা।

এর আগে, নামাজ আদায়ের জন্য সকাল ৭টা থেকে থেকে জায়নামাজ হাতে ঈদগাহে ভিড় করেন মুসল্লিরা। তাদের অনেকের হাতে ছাতাও দেখা যায়। দুই বছর পর এবার তারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামাজ আদায় করলেন। এবার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনো বিধিনিষেধ না থাকলেও নামাজে আসা অনেকের মুখেই মাস্ক দেখা যায়।ঈদ জামাতকে কেন্দ্র করে আশপাশের সড়কে ডাইভারশন দেয় পুলিশ। ফলে মুসল্লিদের কিছুটা পথ হেঁটে মাঠে প্রবেশ করতে হয়েছে। ঈদ জামাতে প্রবেশের মুখে র‌্যাব-পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তীক্ষ্ণ নজরদারি ছিল। নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলায় মুসল্লিরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।সকাল থেকেই ঈদগাহ এলাকায় এবং প্রতিটি গেটে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি ছিল। ব্যাগ নিয়ে আসা অনেককেই তারা তল্লাশি করেন। এছাড়াও প্রত্যেককে আর্চওয়ে গেটের মাধ্যমে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়।

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারি, আধা সরকারি ভবন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ভবন ও সশস্ত্র বাহিনীর সব স্থাপনায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় পতাকা ও ‘ঈদ মোবারক’ খচিত ব্যানার মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ট্রাফিক আইল্যান্ড ও লাইট পোস্টে প্রদর্শন করা হচ্ছে। ঈদ উপলক্ষে আগের রাতে সরকারি ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হয়।

ঈদ উদ্‌যাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, প্রবীণনিবাস, ছোটমণি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, আশ্রয়কেন্দ্র, সেফহোমস, ভবঘুরে কল্যাণকেন্দ্র, দুস্থ কল্যাণ ও মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ঈদের দিন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনা টিকিটে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন সব শিশুপার্কে প্রবেশ এবং বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের বিনা টিকিটে জাদুঘর, আহসান মঞ্জিল, লালবাগের কেল্লা ইত্যাদি দর্শনীয় স্থানে প্রবেশ এবং তা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে শিশুদের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর বাণী

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তাঁরা দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করেছেন। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই যাতে ঈদের আনন্দ সমানভাবে উপভোগ করতে পারে, সেই জন্য মানবতার মুক্তির দিশারি হিসেবে ইসলামের মর্মার্থ ও অন্তর্নিহিত তাৎপর্য দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ুক, বিশ্ব ভরে উঠুক শান্তি আর সৌহার্দ্যে—পবিত্র ঈদুল ফিতরে এটাই তাঁর প্রত্যাশা।

দেশবাসী ও বিশ্বের সব মুসলমানকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বাণীতে বলেন, ঈদ শান্তি, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের অনুপম শিক্ষা দেয়। হিংসা-বিদ্বেষ ও হানাহানি ভুলে মানুষ সাম্য, মৈত্রী ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়। ঈদ ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলের জীবনে আনন্দের বার্তা বয়ে নিয়ে আসে। ঈদের আনন্দ আমাদের সবার।

 

 

 

 

সংশ্লিষ্ট খবর

Leave a Reply

Back to top button