জাতীয়

নিষেধাজ্ঞা’র প্রভাবে বাহিনীটির বিচারবহির্ভূত হত্যা কমেছে:হাস

 

বিশেষ প্রতিনিধি : গত বছরের ডিসেম্বরে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এটা খুব ভালো সংকেত। আমরা আশা করছি, র‍্যাবের আচরণের পরিবর্তন হবে। র‌্যাবের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় বিচারবহির্ভূত হত্যা কমেছে বলে মনে করেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তিনি বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞা কোনো শাস্তি নয়, বাহিনীটিকে শুদ্ধ করার সুযোগ।বৃহস্পতিবার রাজধানীতে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরে এ কথা বলেন হাস।মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে গত ১০ ডিসেম্বর র‍্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে পৃথকভাবে এ নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব বিভাগ) ও পররাষ্ট্র দপ্তর।

পিটার হাস বলেন, র‌্যাবের সাত সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যে নিষেধাজ্ঞা, তা কোনো শত্রুতা বা বিদ্বেষের বিষয় নয়। এটা র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞাও নয়। এটা বাহিনীটিকে শুদ্ধ করার সুযোগ। বাহিনীর সব সদস্যর মানসিক ও শারীরিক ভাষা সংশোধনের সুযোগ।গত কয়েক মাসে র‌্যাবের আচরণে দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখতে পাওয়ার কথাও জানান যুক্তরাষ্ট্রের দূত। তিনি বলেন, গত বছরের ডিসেম্বরে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এটা খুব ভালো সংকেত। আমরা আশা করছি, র‍্যাবের আচরণের পরিবর্তন হবে।

তবে পরিবর্তন যতটুকু হয়েছে, সেটি যথেষ্ট নয় বলেও জানান পিটার হাস। বলেন, যতক্ষণ এটা অর্জিত (তাদের লক্ষ্য) না হচ্ছে, ততক্ষণ তা বহাল থাকবে। এটা স্পষ্ট হওয়া দরকার, র‌্যাব নিয়ে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি।এই নিষেধাজ্ঞার কারণে দুই দেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়েনি বলেও মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের দূত। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের কোনো টানাপড়েন নেই। দুই দেশের সম্পর্কের আবহ চমৎকার। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সহযোগিতার লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তারা কাজ করছে।

গুমের বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে হাস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গুমের অভিযোগগুলোর স্বাধীন তদন্ত প্রক্রিয়া দেখতে চায়।এক প্রশ্নের উত্তরে পিটার হাস বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে (আইপিএস) বাংলাদেশের যোগ দেয়া-না দেয়াটা কোনো বিষয় নয়। কারণ এটা একটা নীতি। এটা বাংলাদেশ কীভাবে নেয়, সেটাই দেখার বিষয়। আবার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে (বিআরআই) যোগ দেয়াটাও বাংলাদেশের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশ কোন জোটে যোগ দেবে, সেটা তাদের বিষয়।

তিনি বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যু এমন একটি কৌশল, এখানে যোগ দেয়া-না দেয়াটা কোনো বিষয় নয়। এটি কোনো ক্লাব নয়। এটি কতগুলো ভিত্তি যেমন- মুক্ত, নিরপেক্ষ, প্রাণবন্ত এবং সমৃদ্ধ নীতির ওপর গড়ে উঠেছে। প্রত্যেক দেশেরই তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতা রয়েছে। বাংলাদেশ এটাকে সমর্থন করছে না, আমি বিষয়টাকে এমনভাবে দেখছি না। তবে এতে বাংলাদেশের যোগ দেয়া-না দেয়াটা কোনো বিষয় নয়। এটা বাংলাদেশ কীভাবে নেয়, সেটাই দেখার বিষয়।চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ- বিআরআই প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দূত বলেন, বিআরআইয়ে যোগ দেয়াটাও বাংলাদেশের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশ কোন জোটে যোগ দেবে, সেটা তাদের বিষয়।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে করা এক প্রশ্নের উত্তরে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচন স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছভাবে হবে কি না, তা নির্ভর করছে বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর। রাজনৈতিক দলগুলো স্বাধীনভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করতে পারছে কি না, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজ তাদের মতপ্রকাশের সুযোগ পাচ্ছে কি না, তার ওপর নির্ভর করছে এটি।বাংলাদেশে বর্তমানে যে রাজনৈতিক সহিংসতা চলছে, তা একটি সঠিক নির্বাচনের জন্য সহায়ক নয়। নির্বাচনের আগে ও পরের ঘটনাও একটি অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অংশ, তাই বাংলাদেশের বর্তমান সহিংসতার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও বিশ্ব সম্প্রদায় নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না জানানোর বিষয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, গণতন্ত্র একটি সংগ্রাম। প্রতিনিয়ত এটি নিয়ে কাজ করতে হয়। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছি। আমরা গণতন্ত্র নিয়ে কাজ করছি।
শ্রম অধিকারের বিষয়ে হাস বলেন, রপ্তানিমুখী শিল্পের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এখনও উদ্বেগ রয়েছে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চায়, বাংলাদেশে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ থাকুক। এতে করে তারা নিজেদের অধিকার আদায়সহ বিভিন্ন ইস্যুতে দর-কষাকষি করতে পারবে।বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ নিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, বিনিয়োগ নিয়ে বাংলাদেশে একটি প্রতিযোগিতা রয়েছে। বিনিয়োগকারীরা উপযুক্ত বাজার খুঁজবেন। সে ক্ষেত্রে যেখানে নিরাপত্তা থাকবে, নিরাপদ পরিবেশ থাকবে; সেটাই তারা বেছে নেবেন।অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিক, কূটনীতিক, শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। এটি সঞ্চালনা করেন আয়োজক সংগঠন সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।

সংশ্লিষ্ট খবর

Leave a Reply

Back to top button