অর্থনীতি

শীতের আগে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছেনা-নসরুল

বিশেষ প্রতিনিধি : দেশে চলমান বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে শীতের আগে কোনো সুখবর নেই বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তাই আরও কিছু দিস ধৈর্য ধরার অনুরোধ করেছেন তিনি।তিনি বলেন, গ্যাসের যোগান কম থাকায় গ্যাস চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন কমে গেছে। শিল্পকারখানায় গ্যাস সরবরাহ করতে গিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোও সংকটে পড়েছে।এদিকে, বিদ্যুৎসহ শিল্পখাতে ভর্তুকি মূল্যে গ্যাস দেয়া আর সম্ভব নয় বলে জানালেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।জ্বালানি তেল সাশ্রয়ে কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রেখে তালিকা করে লোডশেডিং দিচ্ছিল সরকার। গত কয়েকদিনে লোডশেডিং ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। লোডশেডিং হচ্ছে রাতভর।

এরমধ্যে জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের কারণে গেলো ৪ অক্টোবর প্রায় ৯ ঘণ্টার বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর থেকে দেশজুড়ে লোডশেডিংয়ের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে সহনীয় পর্যায়ও।কোথাও কোথাও দিনে রাতে বার বার লোডশেডিং হচ্ছে। রাজধানীতে পরিস্থিতি কিছুটা সহনীয় হলেও প্রান্তিক পর্যায়ে বার বার লোডশেডিংয়ে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।গেলো কয়েকদিন ধরে বিদ্যুতের উৎপাদন নেমেছে ৯ হাজার থেকে ১২ হাজার মেগাওয়াটে। কিন্তু চাহিদা প্রায় ১৪ হাজার মেগাওয়াট।

উৎপাদন কম তাই কমেছে বিদ্যুতের যোগান। মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের সময় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইঙ্গিত দিলেন শীতের আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে না। নসরুল হামিদ বলেন, আমরা চাচ্ছিলাম, অক্টোবর থেকে লোডশেডিং থাকবেই না। কিন্তু আমরা সেটা করতে পারলাম না। কারণ, আমরা গ্যাস আনতে পারিনি। ফের গ্যাস বন্ধ হয়ে গেছে।

তিনি আরো বলেন, বিদ্যুতে গ্যাস বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা এখন ইন্ডাস্ট্রিতে দিচ্ছি। এ কারণেই সমস্যাটা দেখা দিচ্ছে।বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে অফিস সময় পরিবর্তন করা হলো, এখন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ মানুষ। সব কিছু মিলিয়ে পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে?এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমার মনে হয় পরিস্থিতি বেশি খারাপের দিকে যাচ্ছে না। খারাপের দিকে যাচ্ছে, এটা সত্যি কথা। তিনি বলেন, আমাদের ধারণা ছিলো অক্টোবরের দিকে বিদ্যুতের চাহিদা কমে আসবে। কারণ তখন আবহাওয়া ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। কমের মধ্যে আমরা এটা ম্যানেজ করতে পারবো।

নসরুল হামিদ বলেন, আমরা মনে করেছিলাম, চাহিদা কমে আসবে। কিন্তু আবহাওয়ার যে অবস্থা, যে পরিমাণ গরম। বিদ্যুতের চাহিদা আগের মতোই রয়ে গেছে।তিনি বলেন, আমি আশা করেছিলাম গ্যাসের দাম কমে আসবে বিশ্বব্যাপী, যদিও কিছুটা কমেছে স্পট মার্কেটে। কিন্তু যে গ্যাস পাঁচ ডলারে কিনতাম সেটা এখন ২৮ ডলার হয়েছে।

যেটা গত মাসের আগের মাসে ছিল ৪৭ ডলার। কমার পরও আমার জন্য তো এটা বেশি। এছাড়া ডলারের দামও বেড়েছে।নসরুল হামিদ বলেন, এজন্য আমি মনে করি, একটু ধৈর্য ধরা দরকার। গত মাসে বলছিলাম, অক্টোবর থেকে হয়তো আমরা লোডশেডিং থেকে বেরিয়ে আসবো।তিনি বলেন, আমাদের সাত হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে যা তেলে চলে। ১১ হাজার মেগাওয়াট রয়েছে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। বাকি সোলার বা বিদেশ থেকে আনছি। সব কিছু মিলিয়ে সক্ষমতা সাড়ে তিন থেকে চার হাজার মেগাওয়াট। পুরো সিস্টেমের মধ্যে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট আমি গ্যাসে চালাতে পারছি।

লোডশেডিংয়ের কারণে সবার কষ্ট হচ্ছে জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, গতকাল আমার বাড়িতে রাত দেড়টার পর বিদ্যুৎ ছিল না। সবাই ধৈর্য ধরেন, এটা একটা বিশেষ পরিস্থিতি।সামনের বছর আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। বিশ্বব্যাপী খাদ্যের অভাব দেখা দিতে পারে। এটা আমাদের কথা নয়, জাতিসংঘের কথা।

কৃষিতে সেচ ব্যবস্থা সচল রাখাই প্রধান লক্ষ্য উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো শিল্পকারখানায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কতটুকু সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পারি।গ্রামে কোথাও কোথাও আট ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, জ্বালানি ঠিকমতো না পেলে এটা ম্যানেজ করা সম্ভব নয়। জ্বালানি পাওয়ার জন্য অতিরিক্ত অর্থ দরকার, সেই পরিমাণ অর্থ আমাদের নেই। সেই অর্থ নিয়ে যদি ডলার কিনতে চাই, তবে ডলারের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। সেখানে আমরা কন্ট্রোলে আছি।

 

 

সংশ্লিষ্ট খবর

Leave a Reply

Back to top button