জাতীয়

‘দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করতে হবে’

বিশেষ প্রতিনিধি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের ব্রত নিয়ে কাজ করবার আহ্বান জানাচ্ছি। আমি বহু আগে থেকে বলে যাচ্ছি, এক ইঞ্চি জমি যেন খালি না থাকে। কারণ আমাদের খাদ্য আমাদের উৎপাদন করতে হবে। খাদ্য আমাদের প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য আমার ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন দরকার। আমাদের দেশের মানুষের খাদ্যের নিরাপত্তা, পুষ্টির নিরাপত্তা, সেগুলো নিশ্চিত করতে হবে, এটা আমাদের নিজেদের করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু বাংলাদেশ না, উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। আমি জানি, উন্নত দেশগুলোর অবস্থা, এমনকি আমেরিকা, ইউরোপ, ইংল্যান্ডসহ প্রত্যেকটা দেশ এখন অর্থনৈতিক মন্দার কবলে। বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না, খাদ্যের দাম অতিরিক্ত বেড়ে গেছে, সেখানে সব জায়গায় রেশনিং করে দেয়া। এমন একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি।

করোনাভাইরাস মহামারির সময় অর্থনীতির চাকা সচল রাখা সম্ভব হলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও যুদ্ধ ঘিরে নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘যথেষ্ট সমস্যা মোকাবিলা’ করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।এমন বাস্তবতায় প্রশাসনের কর্মী থেকে শুরু করে সবাইকে কৃচ্ছ্রসাধনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশজ উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি মানবসেবার ব্রত নিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের নিজ দায়িত্ব পালনেরও আহ্বান জানান সরকাপ্রধান।

ঢাকার শাহবাগে বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে ১২৪, ১২৫ এবং ১২৬তম আইন ও প্রশাসন প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী এবং সনদ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন; করোনাভাইরাস মহামারির অভিঘাতে বিশ্বজুড়ে সংকট তৈরি হলেও তা মোকাবিলা করেও দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে সরকার সক্ষম হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।শেখ হাসিনা বলেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ আর স্যাংশানের কারণে আজকে আমাদের যথেষ্ট সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সে জন্য আমরা বলেছি কৃচ্ছ্রসাধন করতে হবে সবাইকে। কৃচ্ছ্রতা সাধন করেই আমাদের চেষ্টা করতে হবে।

দেশকে গড়ে তুলতে হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ এবং উৎপাদন বাড়ানোকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।তিনি বলেন, উৎপাদন বৃদ্ধিটা সব থেকে প্রয়োজন। এখনকার যুগে আমি মনে করি সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে। একদিকে কোভিড-১৯ মহামারির যে অভিঘাত, সেই সঙ্গে সঙ্গে এসেছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। তার সঙ্গে হলো আমেরিকা প্রদত্ত স্যাংশান এবং কাউন্টার স্যাংশান। ইউরোপের দেয়া স্যাংশান, যার ফলে আজকে প্রত্যেকটা জিনিস যেগুলো আমাদের আমদানি করতে হয়, সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে।

এটা শুধু বাংলাদেশ না, উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। আমি জানি, উন্নত দেশগুলোর অবস্থা, এমনকি আমেরিকা, ইউরোপ, ইংল্যান্ডসহ প্রত্যেকটা দেশ এখন অর্থনৈতিক মন্দার কবলে। বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না, খাদ্যের দাম অতিরিক্ত বেড়ে গেছে, সেখানে সব জায়গায় রেশনিং করে দেয়া। এমন একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি।পরিস্থতি থেকে উত্তরণে উৎপাদন বাড়ানোর ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন সরকারপ্রধান।তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে আমাদের কী করণীয়, আমি বহু আগে থেকে বলে যাচ্ছি, এক ইঞ্চি জমি যেন খালি না থাকে। কারণ আমাদের খাদ্য আমাদের উৎপাদন করতে হবে। খাদ্য আমাদের প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য আমার ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন দরকার। আমাদের দেশের মানুষের খাদ্যের নিরাপত্তা, পুষ্টির নিরাপত্তা, সেগুলো নিশ্চিত করতে হবে, এটা আমাদের নিজেদের করতে হবে।এটা সবসময় মনে রাখতে হবে। বাইরে থেকে নিয়ে আসা…এটা অত্যন্ত কঠিন একটা সময় আমাদের পার করতে হচ্ছে। কাজেই সেই অবস্থায় আমরা যদি নিজেরা দাঁড়াতে পারি, সেটা হবে আমাদের জন্য সব থেকে ভালো।

এখানে নীতির প্রশ্ন আছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকার বা দলের নীতি হচ্ছে, আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলব। সেই ক্ষেত্রে আমাদের উৎপাদন বৃদ্ধি করা, কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করা, শিক্ষা; শিক্ষাটা হচ্ছে দারিদ্র্য বিমোচনের সব থেকে বড় হাতিয়ার। সেই সঙ্গে সঙ্গে প্রশিক্ষণ।অনেক ঝড়ঝঞ্ছা পার হয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) সফলভাবে অর্জনের পর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও সাফল্য চান তিনি। তিনি বলেন, সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোলে সফলতা আসবে।

শেখ হাসিনা বলেন, পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে আমাদের এটাই হচ্ছে নীতিমালা যে, পরিকল্পনাটা বাস্তবায়ন করলে রিটার্ন আসবে, ফলাফলটা দ্রুত আসবে মানুষের কল্যাণে। আমি সেই পরিকল্পনাই নেব। শুধু বিরাট অঙ্কের টাকা পেলাম, আর একটা পরিকল্পনা নিলাম, সেটা আমরা নেব না।মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের জীবনের প্রতিটি দিকেই আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। কাজেই আমি মনে করি আমাদের প্রশাসনে যারা থাকবেন, তাদের এ বিষয়ে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের ব্রত নিয়ে কাজ করবার আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা যে লক্ষ্য স্থির করেছি, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ, সেই বাংলাদেশ গড়ার কারিগরই তো হবে আজকে যারা নবীন অফিসার, তারা। কাজেই সেইভাবে নিজেদেরকে তৈরি করতে হবে, এটাই আমি মনে করি। মনে রাখতে হবে যে, দেশপ্রেম এবং আত্মমর্যাদা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে একটা দেশকে কিন্তু উন্নত সমৃদ্ধ করা যায় এবং সেভাবে আমাদের কাজ করার…সেভাবে সবাইকে কাজ করতে হবে।

দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ যেন বেকার না থাকে। সেটা যেভাবেই হোক। সে লক্ষ্য নিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ, ডিজিটাল সেন্টার যেমন আমরা করে দিয়েছি, পাশাপাশি গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে শুরু করে যতগুলো প্রতিষ্ঠান করা হয়েছে, উদ্দেশ্য দুটো। স্বাস্থ্যসেবা দেয়া, পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।সরকারি কর্মকর্তাদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা বলে জানালেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি সরকারে আসার পর প্রশাসনে, দ্বিতীয়বার যখন আসি সবার বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দিয়েছি।

এটাই লক্ষ্য, যাদের কাছ থেকে আমি কাজ নেব, তাদের জীবনটা যেন সহজ হয়। তারা যেন সংসারের দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকে। তারা যেন সুষ্ঠুভাবে দেশের কাজে মনোযোগ দিতে পারে।বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে সশরীরে এসে প্রশিক্ষণ শেষ করা প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের হাতে সনদ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কিন্তু ২০১৯ সালের পর তার আর আসা হয়নি শাহবাগের এ একাডেমিতে।করোনাভাইরাস মহমারির কারণে আসা সম্ভব হয়নি বলে জানান প্রধানমন্ত্রী, তবে এখনও করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতনতা থাকলেও এবার আটকে রাখা যায়নি প্রধানমন্ত্রীকে। সশরীরেই এসেছে নবীন কর্মকর্তাদের মাঝে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা কারণ হচ্ছে আমাদের তো সময় শেষ হয়ে আসছে, পাঁচ বছর আমাদের সময়। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, আমার বয়স ৭৬ বছর। ৭৬ বছর তো অনেক বয়স। বুড়ো হয়েছি। কাজেই কতদিন আর চলতে পারব, আসতে পারব, যেকোনো সময়…কোনো একসময় অক্কা পেয়ে যাব, তার তো ঠিক নেই। তাই আমি ঠিক করেছি এবার আর আমি কোনো বাধা মানব না। আমাকে আসতেই হবে।’

বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে ১২৪, ১২৫ ও ১২৬তম আইন ও প্রশাসন কোর্সে অংশ নিয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের ১০৩ কর্মকর্তা, যাদের ৬১ জন পুরুষ এবং ৪২ জন নারী। অংশগ্রহণকারীদের শতভাগ উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাদের ৪৭ জন পেয়েছেন ‘এ প্লাস’ গ্রেড, আর ৫৬ জন ‘এ’ গ্রেড পেয়েছেন।প্রতিটি কোর্সের মেধা তালিকার শীর্ষ ১০ জন করে মোট ৩০ জন পেয়েছেন ‘সার্টিফিকেট অফ এক্সিলেন্স’।

এদের ২১ জন পুরুষ এবং ৯ জন নারী কর্মকর্তা।প্রশিক্ষণার্থীদের হাতে সনদ, ক্রেস্ট ও রেক্টর অ্যাওয়ার্ডস তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।সনদ গ্রহণের পর প্রশিক্ষণে অর্জিত জ্ঞানকে দেশের উন্নয়ন ও মানবসেবায় বিনিয়োগের শপথ নেন জনপ্রশাসনের ১০৩ কর্মকর্তা। এরপর সবাই নিজ আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে নিজেদের সনদ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীকে দেখান তারা।বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে বিভিন্ন সময় দেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণের একটি সংকলন প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ। ওই সময় ‘ভাষণ সংকলন’ বইটির মোড়ক ‍উন্মোচন করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

সংশ্লিষ্ট খবর

Leave a Reply

Back to top button