নারী ও শিশু

৫০ নারীকে ব্ল্যাকমেইল

সাবধান-ফেসবুক প্রতারক বেনজির-চক্র

স্টাফ রিপোর্টার : ৫০ নারীকে ব্ল্যাকমেইল করে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ধরা পড়েছে বেনজির হোসেন শাহিদ হাসান নামে ভয়কংর প্রতারক। সে আমেরিকা প্রবাসী এক বাংলাদেশি বিমান চালকের প্রোফাইল হুবহু কপি করে Shahid Hasan (Pilot Officer) নামে একটি ফেইক ফেসবুক প্রোফাইল তৈরি করে। ফেসবুক প্রোফাইলটিকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য সে নিয়মিত শাহিদ হাসানের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে বিমান চালানোর ছবি ও ভিডিও পোস্ট করত।

প্রতারক বেনজির হোসেন ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ এবং পেজে নিঃসঙ্গ নারী ভিকটিমদের টার্গেট করে ফেসবুক মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করে প্রথমে প্রেমের ফাঁদ ফেলে, পরে বিয়ের প্রলোভন ও স্বপরিবারে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে লুটে নিয়েছে কোটি টাকা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে সে ইতিমধ্যে অর্ধশত নারীর সঙ্গে রোমান্স স্ক্যাম করে। পরে স্বপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করে । এসব অভিযোগে বেনজির হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। সিটিটিসির প্রধান, অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন,

এই বেনজির হোসেন শাহিদ হাসান নামে আমেরিকাপ্রবাসী এক বাংলাদেশি বিমান চালকের প্রোফাইল হুবহু কপি করে Shahid Hasan (Pilot Officer) নামে একটি ফেইক ফেসবুক প্রোফাইল তৈরি করে। ফেসবুক প্রোফাইলটিকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য সে নিয়মিত শাহিদ হাসানের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে বিমান চালানোর ছবি ও ভিডিও পোস্ট করত। প্রতারক বেনজির হোসেন ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ এবং পেজে নিঃসঙ্গ নারী ভিকটিমদের টার্গেট করে ফেসবুক মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করে প্রথমে প্রেমের ফাঁদ ফেলে। পরে বিয়ের প্রলোভন ও স্বপরিবারে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাত।

সে অডিও কলে ভিকটিমদের সাথে কথা বললেও কখনোই ভিডিও কলে নানান অজুহাতে কথা বলত না। এরপর অনলাইন প্রণয়ের একপর্যায়ে সে বিভিন্ন সময় বিপদে পড়ার কথা বলে তার দেয়া বিভিন্ন নগদ নম্বরে (প্রতারণার কাজে ব্যবহার করা ১৯টি নগদ নম্বরের বিষয়ে জানা গিয়েছে) ধাপে ধাপে লাখ লাখ টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছে। প্রতারক বেনজির প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১৩টি নগদ নম্বরে গত ৪ মাসে এক কোটি টাকারও বেশি লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়।

আসাদুজ্জামান বলেন, প্রতারক বেনজির হোসেন নড়াইল জেলায় নিজের বাড়িতে থেকে প্রতারণার কাজ করলেও ক্যাশ আউট করত তার বাড়ি থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে যশোর ও খুলনায় বিভিন্ন নগদ ক্যাশআউট পয়েন্টে। তার প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সিম এবং নগদ নম্বরের রেজিস্ট্রেশনে ব্যবহৃত এনআইডি অন্য ব্যক্তির নামে। ক্যাশ আউট করার সময় প্রতারক বেনজির হোসেন পরিচয় ও চেহারা গোপন করার জন্য ক্যাপ, সানগ্লাস ও মুখে মাস্ক পরে থাকত।

এমনই একজন ভিকটিম স্বপ্না (ছদ্মনাম) একজন সিঙ্গেল মাদার। প্রতারক বেনজির হোসেনের প্রতারণার স্বীকার হয়ে গত সাত মাসে বিভিন্ন নগদ নম্বরে প্রতি মাসে ১৪ থেক ১৫ লাখ করে টাকা দিয়ে প্রায় এক কোটি টাকা খুইয়েছেন। একই সময়ে অপর একজন ভিকটিম জান্নাত (ছদ্মনাম) প্রতারক বেনজিরের কাছে খুইয়েছেন প্রায় ১৫ লাখ টাকা। প্রতারক বেনজির হোসেনের স্মার্টফোনে পঞ্চাশের অধিক ভিকটিমের সন্ধান পাওয়া যায়।

সিটিটিসি জানায়, স্বপ্না ও জান্নাত গত এক সপ্তাহের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে অভিযোগ নিয়ে সিটি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনে প্রতিকারের জন্য আসলে সাইবার টেররিজম ইনভেস্টিগেশন টিম তাদের মামলা করার পরামর্শ দেয়। স্বপ্না রাজধানীর ওয়ারী থানায় প্রতারণার বিষয়ে ২১ নভেম্বর মামলা করেন। পরবর্তী সময়ে ২২ নভেম্বর ছায়া তদন্তে নেমে প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণের মাধ্যমে বেনজির হোসেনকে শনাক্ত করা হয়। পরে খুলনার ফুলতলায় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত নগদ নম্বর থেকে ক্যাশআউটের সময় রোববার সন্ধ্যায় হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়।

অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, দৃশ্যমান কোনো আয়ের উৎস না থাকা সত্ত্বেও বেনজির হোসেন গত কয়েক বছরে প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা অর্থ দিয়ে বিপুল অর্থ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। পাঁচ বিঘা জমির ওপর বাগান বাড়িতে (দোতলা ডুপ্লেক্স ভবন), আনুমানিক ৩ বিঘা জমির ওপর সম্প্রতি কেনা বিলাসবহুল ভবন, নড়াইলে বিভিন্ন জায়গায় আনুমানিক ২০ বিঘা মাছের খামার, নড়াইলে বিভিন্ন স্থানে নির্মিত ভবন, যশোর ও সাভারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বহুতল ভবনসহ বিপুল ব্যাংক ব্যালেন্স।এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বেনজির এইচএসসি পাস করে একটা চাকরিতে যোগ দেয়। চুরির দায়ে সেই চাকরি চলে যায় তার। সে খুবই নিম্নবিত্ত পরিবারের। তার পিতা সেই অঞ্চলের বিভিন্ন হাটবাজারে তালের শাস বিক্রি করত, তবে খুব মেধাবী ছিল।

তার বৈধ কোনো পেশা নাই। তার মূল পেশাই প্রতারণা করা। এলাকার সাধারণ মানুষ সন্দেহ করলেও নানা অপরাধে জড়িত থাকায় কিছু বলত না।তিনি বলেন, ‘একজনের অভিযোগের ফলে আমরা তাকে গ্রেপ্তার করেছি। তার প্রতারণার শিকার অসংখ্য নারী। আমরা ইতোমধ্যে ৫০ জনকে পেয়েছি, যারা বেনজিরের প্রতারণার শিকার হয়েছে।
তার প্রতারণার শিকার হয়ে এক নারী আত্মহত্যাও করেছে। ভিকটিমদের কাছ থেকে আপত্তিকর ছবিও সংগ্রহ করত। অনেক ভিকটিম মানসম্মানের ভয়ে প্রকাশও করতে চায় না।

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button