অপরাধ

ব্যাংক ম্যানেজারকে কলাপাতায় মোড়ানো ভাত খাইয়েছে কেএনএফ

 

বিশেষ প্রতিনিধি বান্দরবান থেকে : বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দীনকে অপহরণের পর কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) অস্ত্রধারীরা ৪৮ ঘণ্টায় অন্তত ছয়বার স্থান বদল করেছিল। কোথাও পাহাড়ি পথে, কোনো সময় ঝিরির পথ ধরে ও মোটরসাইকেলেও সশস্ত্র পাহারার মধ্যে তাঁকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নেওয়া হয়। খেতে দেওয়া হয় কলারপাতা মোড়ানো গরম ভাত, ডাল ও ডিমভাজি। তবে তাঁকে মারধর করা হয়নি।

কেএনএফের জিম্মিদশা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর মুক্তি পান নেজাম উদ্দীন। এরপর তিনি র‌্যাবের কাছে তাঁর বন্দী অবস্থার এমন বিবরণ দিয়েছেন। আজ শুক্রবার বান্দরবান জেলা পরিষদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে কেএনএফের শতাধিক অস্ত্রধারী সোনালী ব্যাংকের রুমা শাখায় অতর্কিতে হামলা চালায়। তারা ব্যাংকের নিরাপত্তায় দায়িত্বরত পুলিশ ও আনসার সদস্য এবং অন্য লোকজনকে জিম্মি করে। তারা পুলিশ ও আনসার সদস্যদের কাছ থেকে দুটি সাব–মেশিনগানসহ (এসএমজি) ১৪টি অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়। ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে টাকা লুটের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দীনকে অপহরণ করে।

অস্ত্রের মুখে ধরে নেওয়ার পর সন্ত্রাসীরা নেজাম উদ্দীনকে চোখ বেঁধে বেথেলপাড়ার পাশ দিয়ে ঝিরির পথে নিয়ে যায়। কিছুদূর নিয়ে চোখ খুলে দিয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টা হেঁটে এক নির্জন জঙ্গলে নিয়ে তাঁকে ঘুমাতে দেওয়া হয়। পরদিন বুধবার সকাল সাড়ে ৭টায় নাশতা খাইয়ে প্রথমে পাহাড়ি ঝিরি ধরে এবং পাহাড় অতিক্রম করে আরেকটি ঝিরিতে নেওয়া হয়। গভীর খাদে ওই ঝিরিতে ৩০-৩৫ জন অস্ত্রধারীর সামনে তাঁকে কলাপাতায় মোড়ানো গরম ভাত, ডাল ও ডিমভাজি খাওয়ানো হয়।

খাওয়া শেষে আবার হাঁটা শুরু হয়। আরেকটি জায়গায় নিয়ে বিশ্রাম করার জন্য ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় দেয়। সেখান থেকে বুধবার রাত আটটার দিকে তাঁকে টংঘরে (মাচাং ঘর) নিয়ে নুডলস খেতে দিলে তিনি খাননি। ওই টংঘরে পাঁচজন অস্ত্রধারীর সঙ্গে রাতে তাঁকে ঘুমাতে দেওয়া হয়। পরদিন সেখান থেকে এক ঘণ্টা পায়ে হেঁটে আরেক জায়গায় নিয়ে রাখা হয়। এক ঘণ্টা বিশ্রামের পর মোটরসাইকেলে করে আরেকটি নতুন জায়গায় নেওয়া হয়। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁকে উদ্ধার করে র‌্যাব।

র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, কেএনএফে সন্ত্রাসীরা ব্যাংকের ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দীনকে পরিবারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার সুযোগ দিয়েছে। তারা এ বিষয়ে প্রশাসনের কাউকে না জানানোর জন্য সতর্ক করে। ওই সূত্র ধরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় রুমা বাজার ও বেথেলপাড়ার মধ্যবর্তী স্থান থেকে নেজাম উদ্দীনকে উদ্ধার করা হয়।
সন্ত্রাসীরা পুলিশ ও আনসার সদস্যদের যেসব অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়েছে, সেগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে খন্দকার আল মঈন জানান।

 

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button