উপসম্পাদকীয়

তথ্য প্রযুক্তির যুগে হ্যাকারদের হাত থেকে বাঁচার উপায়

সানোয়ার হোসেন : আমরা বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বসবাস করছি। প্রতিনিয়ত আমাদের প্রযুক্তি গুলো আধুনিক হচ্ছে। এই আধুনিক হওয়ার ফলে আমাদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে হ্যাকারদের কাছ থেকে। একজন হ্যাকার সর্বদা আমাদের ডাটা নিয়ে আমাদের বø্যাকমেইল করার জন্যে ব্যস্ত থাকে। আর এই বø্যাকমেইলটা হল অন্যের সকল তথ্য গুলো নিজের কাছে অ্যাক্সেস করে নেওয়া। একজন হ্যাকার,সহজ ভাবে একজন ইউজারের সকল কিছু অ্যাক্সেস করতে পারে না। যতক্ষণ না ইউজার একজন হ্যাকারকে অ্যাক্সেস না দেয়। একজন ইউজার না বুঝে বা ভুলবশত তার ফোন বা কম্পিউটারে কিছু সিস্টেম ওপেন করলে সঙ্গে সঙ্গে হ্যাকাররা তার সকল ডাটা পেয়ে যায়। আমারা সর্বদা প্রযুক্তির দিক দিয়ে ডিজিটাল হচ্ছি, তবে প্রযুক্তি ব্যাবহারে ডিজিটাল হতে পারছি না। একজন হ্যাকার এলগরিদম ব্রেক (অষমড়ৎরঃযস ইৎবধশ), ফিশিং (চযরংযরহম), কিলগার (কবুষড়মমবৎং), সিম সোয়াপিং (ঝরস ঝধিঢ়ঢ়রহম), ব্যাংকিং ট্রজান (ইধহশরহম ঞৎড়লধহং), অ্যাপ হ্যাকিং অথবা ম্যালও্যার (অঢ়ঢ় ঐরলধপশরহম ড়ৎ গধষধিৎব), বা ম্যান-ইন-দ্যা-মিডিল-অ্যাটাক (গধহ-রহ-ঃযব-সরফফষব অঃঃধপশ) মাধ্যমে একজন ইউজারের সকল তথ্য এক্সেস করতে পারে। এজন্য প্রযুক্তির দিক দিয়ে ডিজিটাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, প্রযুক্তি ব্যাবহারে ডিজিটাল হওয়া আবশ্যক।
এলগরিদম ব্রেক- এলগরিদম হচ্ছে কোনো একটি কাজ সম্পন্ন করার জন্য কতগুলি সুনির্দিষ্ট ও ধারাবাহিক ধাপের সমষ্টি। কম্পিউটার,মানুষ,রোবট ইত্যাদি এলগরিদমের ধাপগুলো ধারাবাহিভাবে অনুসরণ করে একটি নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করতে পারে।
সমাধান- এলগরিদম ব্রেক না করতে পারে এজন্য আমাদের এস.এস.এল ব্যবহার করতে হবে।
ফিশিং- স্মিসিং হলো ফিশিং এর উদ্দশ্যে পাঠানো একধরনের টেক্সট মেসেজ,যেটাতে আপনাকে লোভ দেখিয়ে একটি লিঙ্কে প্রবেশ করার কথা বলা হয়। তো আর কি ওই লিঙ্কে ক্লিক করলেই আপনাকে লগইন পেজের মতো একটি ফিশিং পেজে নিয়ে যাবে যেখানে লগইন করলে আপনার লগইন ডাটা হ্যাকারের কাছে চলে যাবে। আপনিও হয়তো খুশীর ঠেলায় দিয়ে দিবেন। ব্যাস আপনার দৌড় এখানেই সমাপ্ত।
সমাধান- এধরনের মেসেজে থাকা লিঙ্কে প্রবেশ করা থেকে বিরিত থাকুন।
কিলগার – কিলগার অনেক জনপ্রিয় হ্যাকিং কৌশল। কিলগার দুই ধরনের হতে পারে সফটওয়্যার এÐ হার্ডওয়্যার। কিলগার হলো এমন একটি পদ্ধতি যেখানে সিস্টেমে কিছু সফটওয়ার রান করা হয় যেটা আপনার টাইপ করা সমস্ত লেখা সেভ করে রাখে। যে ডিভাইজে এই সফটওয়ার রান করা হয়েছে সেই ডিভাইজে আপনি যদি আপনার ইমেইল পাসওয়ার্ড ইত্যাদি ইনপুট করেন। তাহলে এই সফটওয়ার আপনার ইনপুটকৃত সব ডাটা সেভ করে রাখবে এবং হ্যাকারকে সরবরাহ করবে।
সমাধান- আপনার ফ্রেন্ড বা অন্য কারুর কম্পিউটার বা স্মার্টফোনে ইমেইল, ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড ইনপুট করার সময় অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করুণ।
ব্যাংকিং ট্রজান- হ্যাকার আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার জন্য একটি অ্যাপ ইউজ করতে পারে। এই পদ্ধতিতে হ্যাকার আপনার ব্যাংকিং অ্যাপের একটি ক্লোন অ্যাপ তৈরি করে সেটা কোনো থার্ড-পার্টি অ্যাপ স্টোরে আপলোড করে। আপনি যখন সেটা আপনার ফোনে ইনস্টল করে লগইন করেন তখন আপনার লগইন ইনফরমেশন হ্যাকারের কাছে পৌঁছে যায়।
সমাধান- থার্ড-পার্টি অ্যাপ স্টোর থেকে এধরনের একাউন্টের অ্যাপ ইন্সটল না করা। এ ধরনের অ্যাপ ইনস্টল করার ক্ষেত্রে সর্বদা ব্যাংকের অফিসিয়াল সাইট থেকে অথবা কোনো ট্রাস্টেড অ্যাপ স্টোর থেকে ইন্সটল করা।
সিম সোয়াপিং- সিম সোয়াপিং অনেক জটিল কৌশল যা আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট চুরির কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আর এর জন্য হ্যাকার সাহেব আপনার টেলিকম কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ করে এবং দাবী করে যে আপনার ব্যবহার করা নাম্বার টি তার কিংবা হারিয়ে ফেলেছে কিংবা তার ক্লোন করতে চায়। এই পদ্ধতিতে হ্যাকার কোনোভাবে আপনার সিম কার্ড অপারেটরকে কনভেন্স করিয়ে আপনার সিম কার্ডের একটি ক্লোন তৈরি করে। এর ফলে আপনার সিমে যেসব কল এবং মেসেজ আসার কথা সেগুলো হ্যাকারের সেই ক্লোন করা সিমেও চলে যায়। তারপর কি হবে সেটা তো বুঝতেই পারছেন।
সমাধান- অবশ্যই কোনো ট্রাস্টেড অপারেটরের সিম কার্ড ইউজ করুন। আর ভালো হয় যে আপনি যে নাম্বার থেকে আপনার অ্যাকাউন্ট তৈরি করেছেন সেটা কারুর সাথে শেয়ার না করা।
অ্যাপ হ্যাকিং অথবা ম্যালও্যার- এই পদ্ধতিতে হ্যাকার একটি ব্যাংকিং ফরম যুক্ত একটি ম্যালও্যার আপনার ডিভাইজে ইন্সটল করায়। এটা আপনার ফোনে একবার ইন্সটল হওয়ার পর এটা চুপচাপ হয়ে যায়। এতটাই চুপচাপ যে আপনি বুঝতেই পারেন না যে আপনার ডিভাইজে কোনো ম্যালও্যার ইনস্টল হয়ে আছে। এটা ইনস্টল হওয়ার পর এটা আপনার পুরো ফোন স্ক্যান করে এবং আপনার ফোনে থাকা ব্যাংকিং অ্যাপ খুজে বের করে। একবার খুজে পেলে এটা আপনার ব্যাংকিং অ্যাপের লগইন পেজের মতো একটা পপআপ লগইন পেজ আপনার সামনে নিয়ে আসে। এরপর যখন আপনি আপনার ব্যাংক একাউন্টের লগইন ডাটা দিয়ে ফরমটি পুরন করেন তখন সেটা হ্যাকারের কাছে পৌঁছে যায়।
সমাধান- কোনো পপআপ উইন্ডোতে লগইন ডাটা প্রবেশ করানো থেকে বিরত থাকুন। ফোনের অ্যাপ ম্যানেজার মাঝে মাঝে চেক করুন সেখানে কোনো অপরিচিত অ্যাপ আছে কিনা। কোনো এক্সটারনাল লিঙ্কে প্রবেশ করার পুরবে সতর্ক থাকুন কেননা এধরনের লিঙ্কে ক্লিকের মাধ্যমে আপনার ফোনে হ্যাকারের তৈরিকৃত ম্যালওয়ার ইনস্টল হয়ে যেতে পারে।
ম্যান ইন-দ্যা মিডিল অ্যাটাক- ম্যান ইন-দ্যা মিডিল অ্যাটাক হ্যাকারদের ব্যবহারিত একটি জনপ্রিয় এবং ভয়ংকর হ্যাকিং টেকনিক। এই পদ্ধতিতে হ্যাকার দুই পক্ষের কথপকথনের মধ্যে প্রবেশ করে এবং সবকিছু দেখে নেয়। এখানে দুই পক্ষের মধ্যে একজন ভিক্টিম এবং অপরটি ব্যাংক অ্যাপ্লিকেশন। মানে এই পদ্ধতিতে আপনি ব্যাংক অ্যাপ্লিকেশনে যাকিছু ইনপুট করেন তা হ্যাকার যেনে যায়।
সমাধানঃ ফ্রী পাবলিক অ্যাক্সেস পয়েন্ট থেকে ইন্টারনেট ইউজ না করা। আন সিকিউর প্রটোকলে(যঃঃঢ়) ব্রাউজিং না করা।
অবশেষে আমরা প্রযুক্তির দিকদিয়ে অনেক এগিয়ে আছি। এই প্রযুক্তি,কেও না কেউ উদ্ভাবন করেছে। তবে কিছু সিস্টেম প্রযুক্তিবিদরা রেখে দেয়,যাতে করে ইউজারদের কিছু কন্ট্রোল তারা অ্যাক্সেস করতে পারে।

 

সংশ্লিষ্ট খবর

Leave a Reply

Back to top button